Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বিদেশি ফলের জাত প্রবর্তন, গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ

ফল হলো নিষিক্ত ও পরিপক্ব ডিম্বাধার।  অন্য কথায় ফল বলতে আমরা অনেকেই বুঝি আম, জাম, পেয়ারা, কলা, পেঁপে, কাঁঠাল। এসব ফল দেশের প্রায় সব এলাকাতে জন্মে। এসব ফলকে তাই আমরা বলি প্রচলিত ফল। এসব ফলের বাইরেও অনেক ফল পাওয়া যায়। এসব ফলকে বলা হয় অপ্রচলিত বা স্বল্প পরিচিত ফল। অর্থাৎ এসব ফলের অস্তিত্ব আছে, খুঁজলে পাওয়া যায় কিন্তু যখন তখন চোখে পড়ে না, দেশের সব এলাকায় জন্মে না, গাছের দেখা মেলে খুব অল্প। অনাদিকাল ধরে যেসব ফল এদেশে চাষ হয়ে আসছে সেগুলোই আমাদের দেশি ফল। এ পর্যন্ত এ দেশে মোট ১৩০টি দেশি ফলের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৬০টি বুনো ফল। তবে সেসব ফলও  যথেষ্ট পুষ্টিসমৃদ্ধ ও সুস্বাদু। বাকি ৭০টি  ফলের মধ্যে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, নারিকেল, লিচু, কুল, লেবু,  আনারাস, কলা ও পেঁপে এই ১০টি  এ দেশের প্রধান দেশি ফল।


কিন্তু বিদেশি ফল কোনগুলো? সহজে উত্তর হলো- যেসব ফলের উৎপত্তি ও চাষ এ দেশের ভূখণ্ডে বা এ অঞ্চলে নয়, বিদেশেই সেসব  ফলের উৎপত্তি ও বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ করা হয়, সেসব ফলকে আমরা বিদেশি ফল বলতে পারি। তর্কটা সেখানেই, ফল তো দেশ চেনে না। তার উপযুক্ত জলবায়ু ও মাটি যেখানে, সেখানে সে জন্মে থাকে। সে অর্থে যেসব ফলের উৎপত্তি  আমাদের অঞ্চলে, সেসব ফলের সংখ্যা খুবই কম। অধিকাংশ ফলই হাজার হাজার বছর পূর্বে অন্যান্য দেশ থেকে এ দেশে এসে খাপ খাইয়ে নিয়েছে এবং কালক্রমে সেগুলো আমাদের ফলে পরিণত হয়েছে। সব বিদেশি ফল আবার এ দেশে ভালো ফল দেয় না। আবার  এমন অনেক বিদেশি ফল আছে যেগুলো বাংলাদেশে সার্থকভাবে চাষ করা সম্ভব। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে, এ ফলগুলোর পরিবেশিক চাহিদার সাথে বাংলাদেশের জলবায়ুর কোন মিল নেই কিন্তু সৌভাগ্যবশত এ ফলগুলোর এমন অনেক জাত আছে যা বাংলাদেশের জলবায়ুতে সাফল্যের সাথে জন্মানো সম্ভব। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত অনেকগুলো বিদেশি ফল প্রবর্তন করা হয়েছে। তারমধ্যে অ্যাভোকেডো, ম্যাঙ্গোস্টিন, স্ট্রবেরি, কিউই, রাম্বুটান, লংগান, ল্যাংসাট, জাবাটিকাবা, শান্তল, আপেল, পিচফল, আলুবোখারা, পার্সিমন, এগ ফ্রুট, সাওয়ার সপ, নাশপাতী, প্যসন ফ্রুট, ড্রাগন ফ্রুট এবং ডুরিয়ান অন্যতম। এদের মধ্যে কিউই, আপেল ও  ডুরিয়ান ছাড়া প্রায় সব ফলই এদেশে গবেষণা প্রতিষ্ঠান গুলোত কমবেশি হচ্ছে এবং কোন কোনটা থেকে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাচ্ছে। যা দেখে অনেকে কিছু কিছু ফলের বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু করেছে এবং কিছু ফলের বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করার চিন্তা-ভাবনা করছে। এ দেশে প্রবর্তনকৃত কিছু বিদেশি ফলের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো-
ড্রাগন ফল : ড্রাগন ফলের (Hylocereus sp.) উৎপত্তিস্থল সেন্ট্রাল আমেরিকা। বাংলাদেশে এ ফল ২০০৭ সালে প্রথম প্রর্বতন করেন। এ সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. এম. এ. রহিম এ ফলের জাত নিয়ে আসেন থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে। ড্রাগন ফল এ দেশের জলবায়ু ও মাটিতে দারুণভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। এখন এ সেন্টার থেকে এ ফলটি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বংশ বিস্তার করা হচ্ছে। এ সেন্টার থেকে ড্রাগন ফলের ৪টি জাত (বাউ ড্রাগন ফল-১; বাউ ড্রাগন ফল-২; বাউ ড্রাগন ফল-৩ ও বাউ ড্রাগন ফল-৪) জাতীয় বীজ বোর্ড থেকে নিবন্ধন করেছে এবং সেখান থেকে তারা চারা তৈরি ও সম্প্রসারণ করছেন। সম্প্রসারণের কাজ গুলো বিভিন্ন বেসরকারি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অসংখ্য বংশানুক্রমিক (PEDIGREE) মাতৃগাছ কৃষকের দোরগোড়ায় সম্প্রসারণ করছে। বংশীয় মাতৃগাছের ক্ষেত্রে এ সেন্টরটি এদেশের মানুষের কাছে অতি পরিচিত, অনন্য। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট  (বারি) থেকে নিবিড়ভাবে গবেষণার ফলে  বারি ড্রাগন ফল -১ নামে  ১টি জাত নিবন্ধন করেছে। ড্রাগন ফলের বেশ কিছু জার্মপ্ল­াজম জনাব কামরুজ্জামান, সাবেক বছরব্যাপী ফল উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর মাধ্যমে নাটোরের মডার্ন হর্টিকালচার সেন্টারে সংগ্রহ করেছে এবং সেখান থেকে তারা চারা তৈরি ও সম্প্রসারণ করছেন।

 

স্ট্রবেরি : স্ট্রবেরি মূলত যেখানে শীতকাল মৃদুভাবাপন্ন ও গ্রীষ্মকাল শুষ্ক সেখানে স্ট্রবেরি ভালো জন্মে। কিন্তু বর্তমানে অনেক উষ্ণম-লীয় জাত উদ্ভাবিত হওয়ায় নাতিশীতোষ্ণ ও উষ্ণম-লেও এর চাষ হচ্ছে। উষ্ণম-লীয় জাতগুলি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সাফল্যজনকভাবে জন্মানো সম্ভব। প্রাথমিক পরীক্ষায় বাংলাদেশে এর চাষ সফল হয়েছে। স্ট্রবেরির ফল দেখতে কিছুটা লিচুর মতোই কিন্তু আকারে ছোট। স্ট্রবেরির কিছু জাত এ দেশের জলবায়ু ও মাটিতে ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছে বলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাবি স্ট্রবেরি-১;  রাবি স্ট্রবেরি-২ ও রাবি স্ট্রবেরি-৩ নামে ৩টি জাত নিবন্ধন করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট  (বারি) থেকে বুদ্ধিদীপ্ত গবেষণার ফলে  বারি স্ট্রবেরি-১ নামে  ১টি জাত  ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্ল­াজম সেন্টার থেকে বাউ  স্ট্রবেরি-১ নামে ১টি জাত নিবন্ধন করেছে। উক্ত জাতগুলো এদেশের বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হচ্ছে।


রাম্বুটান : রাম্বুটান দক্ষিণ-পূর্র্ব এশিয়ার একটি অন্যতম প্রধান ফল। একে অনেকে Hairy Litchi আবার অনেকে queen of fruits  বলে থাকেন। ফলটি দেখতে লিচুর মতোই কিন্তু খোসার উপর খয়েরি রঙের লম্বা লম্বা লোম থাকে। ইহা একটি অত্যন্ত সুস্বাদু ও মুখরোচক ফল। রাম্বুটানের আদি জন্মস্থান সম্ভবত মালয়দ্বীপ অথবা থাইল্যান্ডে। শীতকালে মৃদু শীত অথবা প্রায় সারা বছরই উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু বিদ্যমান এমন স্থানে রাম্বুটান সবচেয়ে ভালো জন্মে। বাংলাদেশের জলবায়ুতে সার্থকভাবে রাম্বুটানের চাষ করা সম্ভব। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্ল­াজম সেন্টার থেকে বাউ  রাম্বুটান-১ নামে ১টি জাত নিবন্ধন করেছে। উক্ত জাতটি এদেশের বিভিন্ন এলাকায়  বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করার জন্য বীজ, গুটিকলম, জোড়কলম ও কুঁড়ি সংযোজনের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট  (বারি) এর উপর গবেষণা চলছে। কিছু ব্যক্তিগত নার্সারিতে ও ব্যক্তি উদ্যোগে এ ফলের সংগ্রহ কাজ চলছে। এ ছাড়া ধোবাউড়া উপজেলায় ডা. ওসমান সাহেবের বাড়িতে একশটি বড় রাম্বুটানের গাছ আছে সে গাছ থেকে ফল ও হচ্ছে।  তবে সে  ফলের  বীজ বড় ও ফলের আকার ছোট।


অ্যাভোকেডো : অ্যাভোকেডো একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল। এ ফলটির বিশেষ আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে এতে শর্করার পরিমাণ কম অথচ তেলের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই অনেকে  একে মাখন ফল বলে থাকেন। পুষ্টি সমস্যা নিরসনেএ ফল উল্লেখযোগ্য  অবদান রাখতে পারবে। এ ফলে প্রায় ৮৮% চর্বি থাকে কিন্তু কোলেস্টেরল মুক্ত। মধ্য আমেরিকা অ্যাভোকেডোর আদি জন্মস্থান। বর্তমানে বাংলাদেশে অ্যাভোকেডোর গাছ প্রথম প্রবর্তন হয় মধুপুরের জলছত্র মিশনের তৎকালীন একজন ফাদারের মাধ্যমে।  বর্তমানে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও অন্যান্য পার্বত্য এলাকায় সীমিত আকারে এর চাষ হচ্ছে।


কাজুবাদাম : কাজুবাদাম একটি ‘নাট’ জাতীয় ফল। অনেকে এটিকে ফল না বলে বাদাম বলতে অধিক পছন্দ করেন। আসলে বাদামও এ ধরনের নীরস ফল। বর্তমানে এ ফলটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের উঁচু অঞ্চলে সীমিত আকারে উৎপাদিত হচ্ছে। কাজুবাদামকে একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বৃক্ষ জাতীয় ফলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কাজুবাদামের স্থান তৃতীয়। দক্ষিণ আমেরিকা (ব্রাজিল) কাজুবাদামের আদি জন্মস্থান। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টার থেকে বাউ  কাজুবাদাম -১ নামে ১টি জাত নিবন্ধন করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)ও  বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ভালো জাত অবমুক্ত করার জন্য নিবিড়ভাবে  গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে ।


আঙ্গুর : আঙ্গুর পৃথিবীর প্রাচীনতম ফলসমূহের মধ্যে অন্যতম। পৃথিবীর বেশিরভাগ মদ তৈরি করা হয় আঙ্গুর থেকে। আঙ্গুর ফল সবার কাছেই সুপরিচিত এবং সমাদৃত। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সীমিত আকারে নি¤œ মানের আঙ্গুর উৎপন্ন হয়ে থাকে। নওগাঁ জেলায় একজন কৃষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আঙ্গুর চাষ শুরু করেছে। বর্তমানে পৃথিবীর অনেক উষ্ণম-লের দেশেই উৎকৃষ্ট মানের আঙ্গুর উৎপন্ন হচ্ছে। সে দিক থেকে বাংলাদেশে উৎকৃষ্ট মানের আঙ্গুর চাষের প্রচুর সম্ভাবনা হয়েছে। বাংলাদেশে এখনও কোন আঙ্গুরের জাত নেই।
 

ম্যাঙ্গোস্টিন : ম্যাঙ্গোস্টিন এমন একটি ফল যা স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। তাই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় একে অনেকে ফলের রানী বলে আখ্যায়িত করেছেন। ম্যাঙ্গোস্টিনের আদি জন্মস্থান হচ্ছে মালয়েশিয়া। বাংলাদেশে সাফল্যজনকভাবে এর চাষ করা সম্ভব। সুনিষ্কাশিত গভীর দোঁআশ মাটি এর জন্য সবচেয়ে উপযোগী, তবে যেকোন মাটিতেই ম্যাঙ্গোস্টিন চাষ করা যায়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্ল­াজম সেন্টারে একটি গাছে এই বছর সর্ব প্রথম ফল ধরেছে। শীতের শেষে ফুল ফোটে ও বর্ষাকালে ফল পাকে। ফল গোলাকার, দেখতে দেশি গাবের মত। পাকা ফলে সাদা রসাল কোয়া থাকে এবং সহজেই ফল থেকে খোসা ছাড়ানো যায়। ফলের ভক্ষণযোগ্য প্রতি ১০০ গ্রামে ২১ কিলোক্যালরি শক্তি, ১.৩ ভাগ আমিষ, ৪.৮ ভাগ শর্করা, ০.৩ ভাগ খনিজ লবণ, ১২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও সামান্য পরিমাণ ভিটামিন সিও ক্যারোটিন থাকে।
 

ডুরিয়ান : ডুরিয়ানের বৈজ্ঞানিক নাম Durio zibethinus Murr। ইহা Bombacaceae পরিবারভুক্ত। ইহা মাঝারি থেকে বৃহৎ আকারের চিরহরিৎ বৃক্ষ। ফল দেখতে অবিকল একটি ক্ষুদ্রকার কাঁঠালের মতো, কিন্তু ফলের কাঁটা দীর্ঘ ও খুবই শক্ত। পাকা ফলে চাপ দিলে খোসা লম্বালম্বি পাঁচটি খণ্ডে আলাদা হয়ে যায়। ভেতরে মাত্র কয়েকটি বড় কোয়া থাকে। সাধারণত বীজ দিয়ে ইহার বংশবিস্তার করা হয়, তবে অঙ্গ (ইনাচিং) ও কুড়ি (ফর্কাট) সংযোজন করেও চারা তৈরি করা যায়। বীজের চারা রোপণের ৮-১০ বছর পর ফল ধারণ করে। কোন কোন গাছ পরাগায়নের ব্যাপারে স্ব-অসঙ্গত, এজন্য এক সাথে একাধিক জাতের গাছ লাগানো উচিত। বাংলাদেশে ডুরিয়ান নিয়ে গবেষণা চলছে কিন্তু এখনও কোন সফলতা আসেনি।
 

নাশপাতি : শীত প্রধান জলবায়ুর ফল। সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলে অতি সীমিত আকারে ইহার চাষ হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে  পরীক্ষামূলকভাবে নাশপাতি জন্মানো সম্ভব হয়েছে যদিও ইহার ফলন বা ফলের মান খুব সন্তোষজনক হয়নি। সিলেটে যে জাতের চাষ হয় তা সম্ভাবত P. khasiana প্রজাতির, ইহা অনেকটাা বুনো ধরণের, ফল নাশপাতি আকৃতির।
 

পার্সিমন : জাপানের দক্ষিণাঞ্চল ও চীন পার্সিমনের উৎপত্তিস্থান। ইহা জাপানের অন্যতম প্রধান ফল। আমাদের দেশের গাব একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। পার্সিমনের গাছ একটি পত্রমোচক মাঝারি আকারের বৃক্ষ, ফল দেখতে টমেটোর মতো, পাকা অবস্থায় হলুদ বা কমলা, ফুলের বৃত্তি স্থায়ীভাবে ফলের সাথে সংযুক্ত থাকে। ইহার কোন কোন জাতের গাছ কেবলমাত্র স্ত্রীফুল (pistillate constants)। কোন কোনটা কেবলমাত্র পুরুষ ফুল (staminate constants) এবং অন্যান্যগুলো পুরুষ ও স্ত্রী (staminate sporadics) উভয় প্রকার ফুল উৎপাদন করে। সব জাতেই বিশেষ ধরনের আবহাওয়ায় বীজ হীন ফল উৎপাদন  করে। বাংলাদেশে জুলাই-সেপ্টেম্বরে ফল পাকে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টারে ৩টি  বড় গাছ আছে,যা থেকে ২০১০ সাল থেকে ফল দিচ্ছে।


প্যাশন ফল : গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অনেক জায়গাই এখন শৌখিন ফলচাষি টবে, বাড়িতে ও নার্সারির মালিকরা সীমিত আকারে প্যাশন ফলের চাষ করছেন। পাকা ফল কেটে পানি-চিনিতে শরবত করে খাওয়া যায়। প্যাশন ফলের শরবতের স্বাদ ‘ট্যাং’ ড্রিংকসের মতো। সেজন্য প্যাশন ফল এ দেশে ধীরে ধীরে ‘ট্যাং ফল’ অর্থাৎ শরবতি ফল নামে

পরিচিত হয়ে উপ্যাশন ফল : গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অনেক জায়গাই এখন শৌখিন ফলচাষি টবে, বাড়িতে ও নার্সারির মালিকরা সীমিত আকারে প্যাশন ফলের চাষ করছেন। পারুটিফল : লংগান :শানতোল :টক আতা :জাবটিকাবা : ঠেছে। লতানো বর্ষজীবী এ গাছটি তার অবলম্বনকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরে যে, তার জন্য বিজ্ঞানীরা এ ফলের নাম দিয়েছেন ‘প্যাশন ফল’। এ ফলের উৎপত্তি দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন অঞ্চলে, বিশেষ করে ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে ও উত্তর আর্জেন্টিনাতে এর ফলের আদি নিবাস বলে ধারণা করা হয়।
 

রুটিফল : ব্রেড ফ্রুট (Bread fruit) ফলের বাংলা নাম দেয়া হয়েছে রুটি ফল। আঠারো শতকের শেষ দিকে বৃটিশ নাবিকেরা দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের তাহিতি দ্বীপ থেকে রুটি ফলকে এ উপমহাদেশে নিয়ে আসেন। তাহিতির লোকেরা তখন রুটিফলকেই প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত। এখনো বেশ কিছু দেশে রুটি ফল প্রধান খাদ্য। এ ফল থেকে রুটি তৈরি করে খাওয়া হয় বলেই এরূপ নাম। ১৯৮২ সালে সার্ক মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে যোগ দেয়ার সময় শ্রীলংকার কৃষিমন্ত্রী শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে রুটি ফলের কয়েকটি চারা এ দেশে নিয়ে আসেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট চত্বরে সেগুলো লাগানো হয়েছিল। এখন সেসব গাছে দিব্যি ফল ধরছে।  রুটি ফলের আর একটি বড় গাছ আছে আসাদগেটে, হর্টিকালচার সেন্টারে। সে গাছেও নিয়মিত ফল ধরেছে। কুমিল্লার কোর্টবাড়িতে অবস্থিত বার্ড এ ব্রেডফ্রুট এর ফল পাওয়া যাচ্ছে। রুটি ফলের গাছ বড় বৃক্ষ, ফলের ব্যাস ১০-৩০ সেন্টিমিটার। ফলের গায়ে কাঁঠালের মতো কাঁটা কাঁটা আছে। ফল বীজবিহীন ও বীজধারী, দুই রকমই আছে।
 

লংগান : লিচুর সহোদর এ ফলটি লিচু যখন ফুরিয়ে যায় তখন তার তেষ্টা মেটায়। বিভিন্ন দেশে ফলটি রপ্তানি করেও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। থাইল্যান্ড, ভারত, মালয়েশিয়া, চীন ও সম্প্রতি তাইওয়ানে লংগানের চাষ হচ্ছে। লংগান শব্দটি এসেছে ‘লংইয়ান’ চীনা শব্দটি থেকে। যার অর্থ হল ‘ড্রাগনের চোখ’। ভারত আর বাংলাদেশের বাঙ্গালিদের কাছে এটি ‘আঁশফল’। বাংলাদেশের কোন কোন এলাকায় এর নাম কাঠলিচু। বরিশালে এর নাম নাড়িয়া লিচু। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টার থেকে বাউ  লংগান -১ও বাউ  লংগান -২ নামে ২টি জাত নিবন্ধন করেছে।
 

শানতোল : শানতোল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি পরিচিত ফল। শানতোলকে কেউ কেউ বুনো ম্যাংগোস্টিন বলেও ডাকেন। বাংলাদেশে এ ফলের চাষ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টারে ও হর্টিকালচার সেন্টার, কল্যাণপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের খামারে বেশ কয়েকটি শানতোলের গাছে সফলভাবে ফল ধরছে। দেশের অন্যান্য স্থানেও চাষ সম্ভব। শানতোল ফলের আলাদা একটা সুগন্ধ আছে। যা প্রথমেই যে কোন ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে পারে। তাই নতুন ধরনের এ ফলটির বাজার ভালো পাওয়া যেতে পারে এবং বিদেশে রপ্তানিও করা যেতে পারে। শানতোলের শাঁস সিরাপে সংরক্ষণ করা যায়, জ্যাম বিদেশে রপ্তানিও করা যেতে পারে। এ হিসেবে শানতোল ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পও গড়ে উঠতে পারে।


আলুবোখরার গাছ ও ফল : আলুবোখরা পিচ ও চেরি ফলের নিকট আত্মীয়। আলুবোখরা আদি জন্মস্থান উত্তর আমেরিকা ও জাপান। বড় গাছ ঠাণ্ডা সইতে পারে। গ্রীষ্মকালে (জুন মাসে) ফল পাকে। আলু বোখরার গাছ বড় হতে একটু সময় নেয়। একটু বেশি বয়স না হলে গাছে ফল ধরে না। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্ল­াজম সেন্টার ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে  (বারি) এর উপর গবেষণা চলছে। কিছু ব্যক্তিগত নার্সারিতে ও ব্যক্তি উদ্যোগে এ ফলের গাছ সংগ্রহ কারতে দেখা গেছে।
 

টক আতা : টক আতা দেখতে মোটেই আতা বা শরিফার মতো নয়। গায়েু গোটা গোটা দাগ নেই, আছে ফলের গা ভর্তি ক্ষুদে ক্ষুদে কাঁটা। ফল পাকলে অবশ্য কাঁটার অনেকটাই মিলিয়ে যায়। ফলটি সারা বিশ্বেই কম বেশি পরিচিত এর ক্রিমের মতো সাদা নরম রসাল সুস্বাদু শাঁসের জন্য। শাঁস সুগন্ধযুক্ত ও টক স্বাদের। শ^াসে প্রচুর ভিটামিন সমৃদ্ধ।


এ দেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় তথা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে টক আতার গাছ আছে। কেউ চাষে করে না, জঙ্গলে হয়। টক আতার আদি বাসভূমি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টার ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে  (বারি) এর উপর গবেষণা চলছে।
 

জাবটিকাবা : জাবটিকাবার আদি নিবাস ব্রাজিল। তৎকালীন পাকিস্তান আমলে ১৯৫৬ সালে বর্তমান হর্টিকালচার সেন্টার কল্যাণপুর ছিল বিএডিসি ফার্ম। তৎকালে প্রায় ১০০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এ ফার্মের কোয়ার্টার সংলগ্ন এলাকায় পথের ধারে তিনটি জাবটিকার চারা রোপণ করেন তৎকালীন ফার্মের জনৈক উদ্যানতত্ত্ববিদ জনাব আঃ সামাদ। কোথা থেকে কিভাবে তিনি এ চারা সংগ্রহ করেছিলেন তা কেউ আর এখন বলতে পারেন না। এখন আর শুধু কল্যাণপুর হর্টিকালচার সেন্টারেই নয়, জাবাটিকার গাছ ফল দিচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের জার্মপ্লাজম সেন্টারে,কল্যাণপুর হর্চিকালচার সেন্টারের ফলবাগানে ও দেশে আরও অনেক শৌখিন ফল প্রেমিকদের বাগানে।  


সরকারও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব ফলকে জনপ্রিয় ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর জাতীয় পর্যায়ে ফল প্রদর্শনীর আয়োজন করছেন। দেশের প্রতিটি বাড়িতে এই বৃক্ষ রোপণ মৌসুমে অন্তত একটি ফলের চারা রোপণ করা উচিত বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। প্রয়োজন ও প্রাপ্তির ব্যবধানের কারণ একদিকে যেমন সচেতনতার অভাব অন্যদিকে রয়েছে উৎপাদনের সীমাবদ্ধতা। তাই দেশের খাদ্যপুষ্টির চাহিদা পূরণসহ আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিদেশি ফলের প্রবর্তন, গবেষণা, উন্নয়ন, উৎপাদন ও ব্যবহার অনস্বীকার্য। সুতরাং স্বাদে, গন্ধে, পুষ্টিতে শ্রেয়তর বর্ণিল বিদেশি ফলগুলোর উৎপাদন দেশব্যাপী সারা বছর বাড়িয়ে তুলতে হবে। উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রয়োজন উপযুক্ত সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থাপনা। এতে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ পরিসরে গড়ে উঠবে আরো প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প। ফলে কৃষিনির্ভর অর্থনীতি হবে আরো মজবুত ও গতিশীল, দেশবাসী পাবে খাদ্যে পুষ্টিমানসম্পন্ন একটি ভবিষ্যৎ।

 

প্রফেসর ড. এম. এ. রহিম১ ড. মোঃ শামছুল আলম (মিঠু)২

১উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ ও পরিচালক, জার্মপ্ল­াজম সেন্টার, বাকৃবি, ময়মনসিংহ। ২সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ, বিনা মোবাইল : ০১৭১১১২৪৭২২, mithuhort@yahoo.com

 

বিদেশি ফলের জাত প্রবর্তন, গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ

প্রফেসর ড. এম. এ. রহিম১ ড. মোঃ শামছুল আলম (মিঠু)২

ফল হলো নিষিক্ত ও পরিপক্ব ডিম্বাধার।  অন্য কথায় ফল বলতে আমরা অনেকেই বুঝি আম, জাম, পেয়ারা, কলা, পেঁপে, কাঁঠাল। এসব ফল দেশের প্রায় সব এলাকাতে জন্মে। এসব ফলকে তাই আমরা বলি প্রচলিত ফল। এসব ফলের বাইরেও অনেক ফল পাওয়া যায়। এসব ফলকে বলা হয় অপ্রচলিত বা স্বল্প পরিচিত ফল। অর্থাৎ এসব ফলের অস্তিত্ব আছে, খুঁজলে পাওয়া যায় কিন্তু যখন তখন চোখে পড়ে না, দেশের সব এলাকায় জন্মে না, গাছের দেখা মেলে খুব অল্প। অনাদিকাল ধরে যেসব ফল এদেশে চাষ হয়ে আসছে সেগুলোই আমাদের দেশি ফল। এ পর্যন্ত এ দেশে মোট ১৩০টি দেশি ফলের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৬০টি বুনো ফল। তবে সেসব ফলও  যথেষ্ট পুষ্টিসমৃদ্ধ ও সুস্বাদু। বাকি ৭০টি  ফলের মধ্যে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, নারিকেল, লিচু, কুল, লেবু,  আনারাস, কলা ও পেঁপে এই ১০টি  এ দেশের প্রধান দেশি ফল।
কিন্তু বিদেশি ফল কোনগুলো? সহজে উত্তর হলো- যেসব ফলের উৎপত্তি ও চাষ এ দেশের ভ‚খÐে বা এ অঞ্চলে নয়, বিদেশেই সেসব  ফলের উৎপত্তি ও বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ করা হয়, সেসব ফলকে আমরা বিদেশি ফল বলতে পারি। তর্কটা সেখানেই, ফল তো দেশ চেনে না। তার উপযুক্ত জলবায়ু ও মাটি যেখানে, সেখানে সে জন্মে থাকে। সে অর্থে যেসব ফলের উৎপত্তি  আমাদের অঞ্চলে, সেসব ফলের সংখ্যা খুবই কম। অধিকাংশ ফলই হাজার হাজার বছর পূর্বে অন্যান্য দেশ থেকে এ দেশে এসে খাপ খাইয়ে নিয়েছে এবং কালক্রমে সেগুলো আমাদের ফলে পরিণত হয়েছে। সব বিদেশি ফল আবার এ দেশে ভালো ফল দেয় না। আবার  এমন অনেক বিদেশি ফল আছে যেগুলো বাংলাদেশে সার্থকভাবে চাষ করা সম্ভব। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে, এ ফলগুলোর পরিবেশিক চাহিদার সাথে বাংলাদেশের জলবায়ুর কোন মিল নেই কিন্তু সৌভাগ্যবশত এ ফলগুলোর এমন অনেক জাত আছে যা বাংলাদেশের জলবায়ুতে সাফল্যের সাথে জন্মানো সম্ভব। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত অনেকগুলো বিদেশি ফল প্রবর্তন করা হয়েছে। তারমধ্যে অ্যাভোকেডো, ম্যাঙ্গোস্টিন, স্ট্রবেরি, কিউই, রাম্বুটান, লংগান, ল্যাংসাট, জাবাটিকাবা, শান্তল, আপেল, পিচফল, আলুবোখারা, পার্সিমন, এগ ফ্রুট, সাওয়ার সপ, নাশপাতী, প্যসন ফ্রুট, ড্রাগন ফ্রুট এবং ডুরিয়ান অন্যতম। এদের মধ্যে কিউই, আপেল ও  ডুরিয়ান ছাড়া প্রায় সব ফলই এদেশে গবেষণা প্রতিষ্ঠান গুলোত কমবেশি হচ্ছে এবং কোন কোনটা থেকে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাচ্ছে। যা দেখে অনেকে কিছু কিছু ফলের বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু করেছে এবং কিছু ফলের বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করার চিন্তা-ভাবনা করছে। এ দেশে প্রবর্তনকৃত কিছু বিদেশি ফলের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো-
ড্রাগন ফল : ড্রাগন ফলের (ঐুষড়পবৎবঁং ংঢ়.) উৎপত্তিস্থল সেন্ট্রাল আমেরিকা। বাংলাদেশে এ ফল ২০০৭ সালে প্রথম প্রর্বতন করেন। এ সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. এম. এ. রহিম এ ফলের জাত নিয়ে আসেন থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে। ড্রাগন ফল এ দেশের জলবায়ু ও মাটিতে দারুণভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। এখন এ সেন্টার থেকে এ ফলটি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বংশ বিস্তার করা হচ্ছে। এ সেন্টার থেকে ড্রাগন ফলের ৪টি জাত (বাউ ড্রাগন ফল-১; বাউ ড্রাগন ফল-২; বাউ ড্রাগন ফল-৩ ও বাউ ড্রাগন ফল-৪) জাতীয় বীজ বোর্ড থেকে নিবন্ধন করেছে এবং সেখান থেকে তারা চারা তৈরি ও স¤প্রসারণ করছেন। স¤প্রসারণের কাজ গুলো বিভিন্ন বেসরকারি ও সরকারি             প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অসংখ্য বংশানুক্রমিক (চঊউওএজঊঊ) মাতৃগাছ কৃষকের দোরগোড়ায় স¤প্রসারণ করছে। বংশীয় মাতৃগাছের ক্ষেত্রে এ সেন্টরটি এদেশের মানুষের কাছে অতি পরিচিত, অনন্য। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট  (বারি) থেকে নিবিড়ভাবে গবেষণার ফলে  বারি ড্রাগন ফল -১ নামে  ১টি জাত নিবন্ধন করেছে। ড্রাগন ফলের বেশ কিছু জার্মপ্ল­াজম জনাব কামরুজ্জামান, সাবেক বছরব্যাপী ফল উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক, কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর এর মাধ্যমে নাটোরের মডার্ন হর্টিকালচার সেন্টারে সংগ্রহ করেছে এবং সেখান থেকে তারা চারা তৈরি ও স¤প্রসারণ করছেন।
স্ট্রবেরি : স্ট্রবেরি মূলত যেখানে শীতকাল মৃদুভাবাপন্ন ও গ্রীষ্মকাল শুষ্ক সেখানে স্ট্রবেরি ভালো জন্মে। কিন্তু বর্তমানে অনেক উষ্ণমÐলীয় জাত উদ্ভাবিত হওয়ায় নাতিশীতোষ্ণ ও উষ্ণমÐলেও এর চাষ হচ্ছে। উষ্ণমÐলীয় জাতগুলি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সাফল্যজনকভাবে জন্মানো সম্ভব। প্রাথমিক পরীক্ষায় বাংলাদেশে এর চাষ সফল হয়েছে। স্ট্রবেরির ফল দেখতে কিছুটা লিচুর মতোই কিন্তু আকারে ছোট। স্ট্রবেরির কিছু জাত এ দেশের জলবায়ু ও মাটিতে ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছে বলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাবি স্ট্রবেরি-১;  রাবি স্ট্রবেরি-২ ও রাবি স্ট্রবেরি-৩ নামে ৩টি জাত নিবন্ধন করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট  (বারি) থেকে বুদ্ধিদীপ্ত গবেষণার ফলে  বারি স্ট্রবেরি-১ নামে  ১টি জাত  ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্ল­াজম সেন্টার থেকে বাউ  স্ট্রবেরি-১ নামে ১টি জাত নিবন্ধন করেছে। উক্ত জাতগুলো এদেশের বিভিন্ন এলাকায়                বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হচ্ছে।
রাম্বুটান : রাম্বুটান দক্ষিণ-পূর্র্ব এশিয়ার একটি অন্যতম প্রধান ফল। একে অনেকে ঐধরৎু খরঃপযর আবার অনেকে য়ঁববহ ড়ভ ভৎঁরঃং  বলে থাকেন। ফলটি দেখতে লিচুর মতোই কিন্তু খোসার উপর খয়েরি রঙের লম্বা লম্বা লোম থাকে। ইহা একটি অত্যন্ত সুস্বাদু ও মুখরোচক ফল। রাম্বুটানের আদি জন্মস্থান সম্ভবত মালয়দ্বীপ অথবা থাইল্যান্ডে। শীতকালে মৃদু শীত অথবা প্রায় সারা বছরই উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু বিদ্যমান এমন স্থানে রাম্বুটান সবচেয়ে ভালো জন্মে। বাংলাদেশের জলবায়ুতে সার্থকভাবে রাম্বুটানের চাষ করা সম্ভব। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্ল­াজম সেন্টার থেকে বাউ  রাম্বুটান-১ নামে ১টি জাত নিবন্ধন করেছে। উক্ত জাতটি এদেশের বিভিন্ন এলাকায়  বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করার জন্য বীজ, গুটিকলম, জোড়কলম ও কুঁড়ি সংযোজনের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট  (বারি) এর উপর গবেষণা চলছে। কিছু ব্যক্তিগত নার্সারিতে ও ব্যক্তি উদ্যোগে এ ফলের সংগ্রহ কাজ চলছে। এ ছাড়া ধোবাউড়া উপজেলায় ডা. ওসমান সাহেবের বাড়িতে একশটি বড় রাম্বুটানের গাছ আছে সে গাছ থেকে ফল ও হচ্ছে।  তবে সে  ফলের  বীজ বড় ও ফলের আকার ছোট।
অ্যাভোকেডো : অ্যাভোকেডো একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল। এ ফলটির বিশেষ আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে এতে শর্করার পরিমাণ কম অথচ তেলের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই অনেকে  একে মাখন ফল বলে থাকেন। পুষ্টি সমস্যা নিরসনেএ ফল উল্লেখযোগ্য  অবদান রাখতে পারবে। এ ফলে প্রায় ৮৮% চর্বি থাকে কিন্তু কোলেস্টেরল মুক্ত। মধ্য আমেরিকা অ্যাভোকেডোর আদি জন্মস্থান। বর্তমানে বাংলাদেশে অ্যাভোকেডোর গাছ প্রথম প্রবর্তন হয় মধুপুরের জলছত্র মিশনের তৎকালীন একজন ফাদারের মাধ্যমে।  বর্তমানে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও অন্যান্য পার্বত্য এলাকায় সীমিত আকারে এর চাষ হচ্ছে।
কাজুবাদাম : কাজুবাদাম একটি ‘নাট’ জাতীয় ফল। অনেকে এটিকে ফল না বলে বাদাম বলতে অধিক পছন্দ করেন। আসলে বাদামও এ ধরনের নীরস ফল। বর্তমানে এ ফলটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের উঁচু অঞ্চলে সীমিত আকারে উৎপাদিত হচ্ছে। কাজুবাদামকে একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বৃক্ষ জাতীয় ফলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কাজুবাদামের স্থান তৃতীয়। দক্ষিণ আমেরিকা (ব্রাজিল) কাজুবাদামের আদি জন্মস্থান। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টার থেকে বাউ  কাজুবাদাম -১ নামে ১টি জাত নিবন্ধন করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)ও  বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ভালো জাত অবমুক্ত করার জন্য নিবিড়ভাবে  গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে ।
আঙ্গুর : আঙ্গুর পৃথিবীর প্রাচীনতম ফলসমূহের মধ্যে অন্যতম। পৃথিবীর বেশিরভাগ মদ তৈরি করা হয় আঙ্গুর থেকে। আঙ্গুর ফল সবার কাছেই সুপরিচিত এবং সমাদৃত। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সীমিত আকারে নি¤œ মানের আঙ্গুর উৎপন্ন হয়ে থাকে। নওগাঁ জেলায় একজন কৃষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আঙ্গুর চাষ শুরু করেছে। বর্তমানে পৃথিবীর অনেক উষ্ণমÐলের দেশেই উৎকৃষ্ট মানের আঙ্গুর উৎপন্ন হচ্ছে। সে দিক থেকে বাংলাদেশে উৎকৃষ্ট মানের আঙ্গুর চাষের প্রচুর সম্ভাবনা হয়েছে। বাংলাদেশে এখনও কোন আঙ্গুরের জাত নেই।
ম্যাঙ্গোস্টিন : ম্যাঙ্গোস্টিন এমন একটি ফল যা স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। তাই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় একে অনেকে ফলের রানী বলে আখ্যায়িত করেছেন। ম্যাঙ্গোস্টিনের আদি জন্মস্থান হচ্ছে মালয়েশিয়া। বাংলাদেশে সাফল্যজনকভাবে এর চাষ করা সম্ভব। সুনিষ্কাশিত গভীর দোঁআশ মাটি এর জন্য সবচেয়ে উপযোগী, তবে যেকোন মাটিতেই ম্যাঙ্গোস্টিন চাষ করা যায়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্ল­াজম সেন্টারে একটি গাছে এই বছর সর্ব প্রথম ফল ধরেছে। শীতের শেষে ফুল ফোটে ও বর্ষাকালে ফল পাকে। ফল গোলাকার, দেখতে দেশি গাবের মত। পাকা ফলে সাদা রসাল কোয়া থাকে এবং সহজেই ফল থেকে খোসা ছাড়ানো যায়। ফলের ভক্ষণযোগ্য প্রতি ১০০ গ্রামে ২১ কিলোক্যালরি শক্তি, ১.৩ ভাগ আমিষ, ৪.৮ ভাগ শর্করা, ০.৩ ভাগ খনিজ লবণ, ১২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও সামান্য পরিমাণ ভিটামিন সিও ক্যারোটিন থাকে।
ডুরিয়ান : ডুরিয়ানের বৈজ্ঞানিক নাম উঁৎরড় ুরনবঃযরহঁং গঁৎৎ। ইহা ইড়সনধপধপবধব পরিবারভুক্ত। ইহা মাঝারি থেকে বৃহৎ আকারের চিরহরিৎ বৃক্ষ। ফল দেখতে অবিকল একটি ক্ষুদ্রকার কাঁঠালের মতো, কিন্তু ফলের কাঁটা দীর্ঘ ও খুবই শক্ত। পাকা ফলে চাপ দিলে খোসা লম্বালম্বি পাঁচটি খÐে আলাদা হয়ে যায়। ভেতরে মাত্র কয়েকটি বড় কোয়া থাকে। সাধারণত বীজ দিয়ে ইহার বংশবিস্তার করা হয়, তবে অঙ্গ (ইনাচিং) ও কুড়ি (ফর্কাট) সংযোজন করেও চারা তৈরি করা যায়। বীজের চারা রোপণের              ৮-১০ বছর পর ফল ধারণ করে। কোন কোন গাছ পরাগায়নের ব্যাপারে স্ব-অসঙ্গত, এজন্য এক সাথে একাধিক জাতের গাছ লাগানো উচিত। বাংলাদেশে ডুরিয়ান নিয়ে গবেষণা চলছে কিন্তু এখনও কোন সফলতা আসেনি।
নাশপাতি : শীত প্রধান জলবায়ুর ফল। সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলে অতি সীমিত আকারে ইহার চাষ হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে  পরীক্ষামূলকভাবে নাশপাতি জন্মানো সম্ভব হয়েছে যদিও ইহার ফলন বা ফলের মান খুব সন্তোষজনক হয়নি। সিলেটে যে জাতের চাষ হয় তা সম্ভাবত চ. শযধংরধহধ প্রজাতির, ইহা অনেকটাা বুনো ধরণের, ফল নাশপাতি আকৃতির।
পার্সিমন : জাপানের দক্ষিণাঞ্চল ও চীন পার্সিমনের উৎপত্তিস্থান। ইহা জাপানের অন্যতম প্রধান ফল। আমাদের দেশের গাব একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। পার্সিমনের গাছ একটি পত্রমোচক মাঝারি আকারের বৃক্ষ, ফল দেখতে টমেটোর মতো, পাকা অবস্থায় হলুদ বা কমলা, ফুলের বৃত্তি স্থায়ীভাবে ফলের সাথে সংযুক্ত থাকে। ইহার কোন কোন জাতের গাছ কেবলমাত্র স্ত্রীফুল (ঢ়রংঃরষষধঃব পড়হংঃধহঃং)। কোন কোনটা কেবলমাত্র পুরুষ ফুল (ংঃধসরহধঃব পড়হংঃধহঃং) এবং অন্যান্যগুলো পুরুষ ও স্ত্রী (ংঃধসরহধঃব ংঢ়ড়ৎধফরপং) উভয় প্রকার ফুল উৎপাদন করে। সব জাতেই বিশেষ ধরনের আবহাওয়ায় বীজ হীন ফল উৎপাদন  করে। বাংলাদেশে জুলাই-সেপ্টেম্বরে ফল পাকে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টারে ৩টি  বড় গাছ আছে,যা থেকে ২০১০ সাল থেকে ফল দিচ্ছে।
প্যাশন ফল : গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অনেক জায়গাই এখন শৌখিন ফলচাষি টবে, বাড়িতে ও নার্সারির মালিকরা সীমিত আকারে প্যাশন ফলের চাষ করছেন। পাকা ফল কেটে পানি-চিনিতে শরবত করে খাওয়া যায়। প্যাশন ফলের শরবতের স্বাদ ‘ট্যাং’ ড্রিংকসের মতো। সেজন্য প্যাশন ফল এ দেশে ধীরে ধীরে ‘ট্যাং ফল’ অর্থাৎ শরবতি ফল নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। লতানো বর্ষজীবী এ গাছটি তার অবলম্বনকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরে যে, তার জন্য বিজ্ঞানীরা এ ফলের নাম দিয়েছেন ‘প্যাশন ফল’। এ ফলের উৎপত্তি দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন অঞ্চলে, বিশেষ করে ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে ও উত্তর আর্জেন্টিনাতে এর ফলের আদি নিবাস বলে ধারণা করা হয়।
রুটিফল : ব্রেড ফ্রুট (ইৎবধফ ভৎঁরঃ) ফলের বাংলা নাম দেয়া হয়েছে রুটি ফল। আঠারো শতকের শেষ দিকে বৃটিশ নাবিকেরা দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের তাহিতি দ্বীপ থেকে রুটি ফলকে এ উপমহাদেশে নিয়ে আসেন। তাহিতির লোকেরা তখন রুটিফলকেই প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত। এখনো বেশ কিছু দেশে রুটি ফল প্রধান খাদ্য। এ ফল থেকে রুটি তৈরি করে খাওয়া হয় বলেই এরূপ নাম। ১৯৮২ সালে সার্ক মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে যোগ দেয়ার সময় শ্রীলংকার কৃষিমন্ত্রী শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে রুটি ফলের কয়েকটি চারা এ দেশে নিয়ে আসেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট চত্বরে সেগুলো লাগানো হয়েছিল। এখন সেসব গাছে দিব্যি ফল ধরছে।  রুটি ফলের আর একটি বড় গাছ আছে আসাদগেটে, হর্টিকালচার সেন্টারে। সে গাছেও নিয়মিত ফল ধরেছে। কুমিল্লার কোর্টবাড়িতে অবস্থিত বার্ড এ ব্রেডফ্রুট এর ফল পাওয়া যাচ্ছে। রুটি ফলের গাছ বড় বৃক্ষ, ফলের ব্যাস ১০-৩০ সেন্টিমিটার। ফলের গায়ে কাঁঠালের মতো কাঁটা কাঁটা আছে। ফল বীজবিহীন ও           বীজধারী, দুই রকমই আছে।
লংগান : লিচুর সহোদর এ ফলটি লিচু যখন ফুরিয়ে যায় তখন তার তেষ্টা মেটায়। বিভিন্ন দেশে ফলটি রপ্তানি করেও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। থাইল্যান্ড, ভারত, মালয়েশিয়া, চীন ও সম্প্রতি তাইওয়ানে লংগানের চাষ হচ্ছে। লংগান শব্দটি এসেছে ‘লংইয়ান’ চীনা শব্দটি থেকে। যার অর্থ হল ‘ড্রাগনের চোখ’। ভারত আর বাংলাদেশের বাঙ্গালিদের কাছে এটি ‘আঁশফল’। বাংলাদেশের কোন কোন এলাকায় এর নাম কাঠলিচু। বরিশালে এর নাম নাড়িয়া লিচু। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টার থেকে বাউ  লংগান -১ও বাউ  লংগান -২ নামে ২টি জাত নিবন্ধন করেছে।
শানতোল : শানতোল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি পরিচিত ফল। শানতোলকে কেউ কেউ বুনো ম্যাংগোস্টিন বলেও ডাকেন। বাংলাদেশে এ ফলের চাষ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টারে ও হর্টিকালচার সেন্টার, কল্যাণপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের খামারে বেশ কয়েকটি শানতোলের গাছে সফলভাবে ফল ধরছে। দেশের অন্যান্য স্থানেও চাষ সম্ভব। শানতোল ফলের আলাদা একটা সুগন্ধ আছে। যা প্রথমেই যে কোন ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে পারে। তাই নতুন ধরনের এ ফলটির বাজার ভালো পাওয়া যেতে পারে এবং বিদেশে রপ্তানিও করা যেতে পারে। শানতোলের শাঁস সিরাপে সংরক্ষণ করা যায়, জ্যাম বিদেশে রপ্তানিও করা যেতে পারে। এ হিসেবে শানতোল ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পও গড়ে উঠতে পারে।
আলুবোখরার গাছ ও ফল : আলুবোখরা পিচ ও চেরি ফলের নিকট আত্মীয়। আলুবোখরা আদি জন্মস্থান উত্তর আমেরিকা ও জাপান। বড় গাছ ঠাÐা সইতে পারে। গ্রীষ্মকালে (জুন মাসে) ফল পাকে। আলু বোখরার গাছ বড় হতে একটু সময় নেয়। একটু বেশি বয়স না হলে গাছে ফল ধরে না। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্ল­াজম সেন্টার ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে  (বারি) এর উপর গবেষণা চলছে। কিছু ব্যক্তিগত নার্সারিতে ও ব্যক্তি উদ্যোগে এ ফলের গাছ সংগ্রহ কারতে দেখা গেছে।
টক আতা : টক আতা দেখতে মোটেই আতা বা শরিফার মতো নয়। গায়েু গোটা গোটা দাগ নেই, আছে ফলের গা ভর্তি ক্ষুদে ক্ষুদে কাঁটা। ফল পাকলে অবশ্য কাঁটার অনেকটাই মিলিয়ে যায়। ফলটি সারা বিশ্বেই কম বেশি পরিচিত এর ক্রিমের মতো সাদা নরম রসাল সুস্বাদু শাঁসের জন্য। শাঁস সুগন্ধযুক্ত ও টক স্বাদের। শ^াসে প্রচুর ভিটামিন সমৃদ্ধ।
এ দেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় তথা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে টক আতার গাছ আছে। কেউ চাষে করে না, জঙ্গলে হয়। টক আতার আদি বাসভ‚মি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টার ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে  (বারি) এর উপর গবেষণা চলছে।
জাবটিকাবা : জাবটিকাবার আদি নিবাস ব্রাজিল। তৎকালীন পাকিস্তান আমলে ১৯৫৬ সালে বর্তমান হর্টিকালচার সেন্টার কল্যাণপুর ছিল বিএডিসি ফার্ম। তৎকালে প্রায় ১০০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এ ফার্মের কোয়ার্টার সংলগ্ন এলাকায় পথের ধারে তিনটি জাবটিকার চারা রোপণ করেন তৎকালীন ফার্মের জনৈক উদ্যানতত্ত¡বিদ জনাব আঃ সামাদ। কোথা থেকে কিভাবে তিনি এ চারা সংগ্রহ করেছিলেন তা কেউ আর এখন বলতে পারেন না। এখন আর শুধু কল্যাণপুর হর্টিকালচার সেন্টারেই নয়, জাবাটিকার গাছ ফল দিচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত¡ বিভাগের জার্মপ্লাজম সেন্টারে,কল্যাণপুর হর্চিকালচার সেন্টারের ফলবাগানে ও দেশে আরও অনেক শৌখিন ফল প্রেমিকদের বাগানে।  
সরকারও সা¤প্রতিক বছরগুলোতে এসব ফলকে জনপ্রিয় ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর জাতীয় পর্যায়ে ফল প্রদর্শনীর আয়োজন করছেন। দেশের প্রতিটি বাড়িতে এই বৃক্ষ রোপণ মৌসুমে অন্তত একটি ফলের চারা রোপণ করা উচিত বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। প্রয়োজন ও প্রাপ্তির ব্যবধানের কারণ একদিকে যেমন সচেতনতার অভাব অন্যদিকে রয়েছে উৎপাদনের সীমাবদ্ধতা। তাই দেশের খাদ্যপুষ্টির চাহিদা পূরণসহ আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিদেশি ফলের প্রবর্তন, গবেষণা, উন্নয়ন, উৎপাদন ও ব্যবহার অনস্বীকার্য।              সুতরাং স্বাদে, গন্ধে, পুষ্টিতে শ্রেয়তর বর্ণিল বিদেশি ফলগুলোর উৎপাদন দেশব্যাপী সারা বছর বাড়িয়ে তুলতে হবে। উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রয়োজন উপযুক্ত সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থাপনা। এতে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ পরিসরে গড়ে উঠবে আরো প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প। ফলে কৃষিনির্ভর অর্থনীতি হবে আরো মজবুত ও গতিশীল, দেশবাসী পাবে খাদ্যে পুষ্টিমানসম্পন্ন একটি ভবিষ্যৎ। য়

১উদ্যানতত্ত¡ বিভাগ ও পরিচালক, জার্মপ্ল­াজম সেন্টার, বাকৃবি, ময়মনসিংহ। ২সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার, উদ্যানতত্ত¡ বিভাগ, বিনা মোবাইল : ০১৭১১১২৪৭২২, mithuhort@yahoo.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon